কিভাবে এক দলিত সমাজের ছেলে ভারতীয় সংবিধানের জনক হলেন।

কিভাবে এক দলিত সমাজের ছেলে ভারতীয় সংবিধানের জনক হলেন।
Dr B.R. Ambedkar
১৮৯১ সালে মহারাষ্ট্রের রত্নাগিরি নামক একটি স্থানে একটি শক্তিশালী দলিত নেতার জন্ম হয়।
উনি একজন শক্তিশালী রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ, বিশিষ্ট লেখক ,বৌদ্ধ ধর্মের পুনঃজাগরণ কাড়ি ও একজন বিশিষ্ট পণ্ডিত ছিলেন যার প্রচন্ড তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ছিল।
এই মহান মানুষটির নাম ছিল ভীমরাও রামজি আম্বেদকর যাকে বাবাসাহেব আম্বেদকর ও বলা হয়।ভারতীয় সংবিধানে এনার অবদানের জন্য এনাকে ভারতীয় সংবিধানের জনক বলা হয়।

যখন বাবাসাহেব ছোট ছিল তখন তারা সপরিবারে রত্নাগর থেকে সাতারা নামক একটি জায়গাতে চলে আসে। ছোটবেলা থেকেই অনেক আতঙ্কিত ও দুঃখিত করে দেওয়ার মতো ঘটনা তার সাথে ঘটে। যখন বাবাসাহেব মাত্র পাঁচ বছর বয়সের ছিলেন তখনই তার মায়ের মৃত্যু হয়ে যায়।
বাবাসাহেবের ছোট বেলা থেকেই পড়াশোনায় আগ্রহ ছিল ও তিনি পড়াশোনা করতে চাইতেন। তিনি তার বাবার কাছে অনুরোধ করতেন তাকে স্কুলে ভর্তি করার জন্য কিন্তু দলিত সমাজের হওয়ার কারণে তার বাবা তাকে স্কুলে ভর্তি করতে অক্ষম ছিলেন। বাবাসাহেব এর অনেক অনুরোধের পর তার বাবা শিক্ষকদের কাছে অনুরোধ করে তাকে একটি নিকটবর্তী স্কুলে ভর্তি করেন কিন্তু একটা শর্ত ছিল যে বাবাসাহেব ক্লাসের ভিতর পড়তে পারবে না তাকে ক্লাসের বাইরে বসে পড়তে হবে। কিন্তু ক্লাসের বাইরে বসেই বাবাসাহেব পরীক্ষায় এমন ফলাফল করত যেগুলো ক্লাসের ভিতর বসে থাকা ব্রাহ্মণের ছেলেরাও পারত না ও সবাই বাবাসাহেব কে দেখে অবাক হয়ে যেত যে কি করে একটা ছেলে ক্লাসের বাইরে বসে সবার থেকে ভালো নাম্বার পাচ্ছে।
একবার শিক্ষক বাবাসাহেব কে বলে ব্ল্যাকবোর্ডের অংকটা করতে। যখন বাবাসাহেব অংকটা করতে আসে তখন হঠাৎ সে দেখে যে ক্লাসের বাকী ছাত্ররা সবাই চিৎকার করছে “মাষ্টারমশাই ও নিচু জাতের ও নিচু জাতের” ও যে যার টিফিন বাক্স নিয়ে ক্লাসের পিছন দিকে সরে যায় কারণ তাদের ভয় ছিল যেন ভিমরাও এর ছায়া লেগে তারা ও তাদের খাবার অপবিত্র না হয়ে যায়।
এমন অনেক ব্যথা ও ধাক্কা উনার জীবনে আসে।
একবার বাবাসাহেব গ্রামের একটি কুয়ো দিয়ে একটু জল খেয়ে ফেলেছিলেন, এটা দেখে গ্রামের কিছু লোকেরা বাবাসাহেব কে ওখানেই মারধর শুরু করে।
একবার বাবাসাহেব একটি রিক্সাওয়ালার রিক্সায় চেপে যাচ্ছিলেন কিন্তু মাঝ রাস্তায় রিকশা ওলা কোন কারনে জানতে পেরে যায় যে বাবাসাহেব দলিত সমাজের ছেলে। এটা জানতে পেরেই রিস্কাওয়ালা বাবাসাহেব কে রিক্সা থেকে নামিয়ে দেয় কিন্তু সে একটা শর্তে রাজি হয় যে বাবাসাহেব কে দ্বিগুণ টাকা দিতে হবে ও এবার রিক্সাও বাবাসাহেব নিজেই চালাবেন।
সেই সময়ের মানুষেরা দলিত সমাজের লোকেদের আওয়াজ শুনলেও নিজেদের অপবিত্র মনে করত।
ছুয়ে নিলে অপবিত্র ,আওয়াজ শুনলে অপবিত্র, ছায়ার জন্য অপবিত্র এইসব ব্যথা যেগুলো বাবাসাহেব কে সহ্য করতে হয়েছিল এগুলো পড়ে গিয়ে ওনাকে একজন শক্তিশালী নেতা বানিয়ে তুলেছিল।
ভিমরাও জিকে স্কুলে সংস্কৃত পড়তে দেওয়া হতো না শিক্ষক বলতেন “সংস্কৃত তো ব্রাহ্মণদের পড়ার জন্য এটা তোর পড়ার জন্য নয়”।
সেই সময় সায়াজি গায়কোয়াড নামে একজন মহারাজ ছিলেন।উনি বাবা সাহেবের সমস্যা বুঝেছিলেন ও তিনি সমস্ত খরচা দিয়ে বাবাসাহেব কে বিদেশে পড়তে পাঠান ।প্রথমে বাবাসাহেব মুম্বাইতে ইংরেজি তে পড়াশোনা করেন।তখন বাবাসাহেব ব্রাহ্মণদের বলতেন যে তোমরা আমাকে এখানে পড়াশোনা করতে দেবে না তাহলে কি হয়েছে,আমি বিদেশের পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করব।
এরপর তিনি কলম্বিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় এম.এ ও পি.এই.চডি করেন ওখানেও তিনি থামলেন না।

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি চিত্র .

এরপর তিনি চলে গেলেন লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স এ পড়াশোনা করতে।

লন্ডন ইকোনমিক্সের একটি চিত্র


পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর উনি দেশে আবার মহারাজের কাছে ফিরে আসেন ও মহারাজ তাকে মিলিটারি সেক্রেটারি-র চাকরি দেন।
এটা এখনকার কথা না কথা হচ্ছে 112 বছর পুরনো ১৯০৮-১৯০৯ সালের কথা যখন সবথেকে নিচু জাতের একটা ছেলে বিদেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে মিলিটারি সেক্রেটারির চাকরি করে ,কথাটা অসম্ভব মনে হলেও সত্যি।এখন বাবাসাহেব বড় চাকরি করতেন কিন্তু সেই ছোঁয়া ছুত এখনো তাকে ছাড়েনি ওখানকার যে সরকারি পিয়ন ছিলো সে দূর দিয়ে বাবাসাহেব কে কাগজপত্র ছুঁড়ে দিত ও তাকে অফিসের ক্যান্টিনে খেতে দেওয়া হতো না তাকে বাইরে গিয়ে টিফিন খেয়ে আসতে হতো।এত সমস্যার সম্মুখীন হয়েও তিনি থামলেন না এরপর তিনি বিভিন্ন বই লেখেন ও তার বইয়ের ওপর ভিত্তি করেই পরে আর.বি‌.আই (রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া) স্থাপিত হয়। ভাবাই অসম্ভব দলিত সমাজের এক ছেলের লেখা বইয়ের উপর ভিত্তি করে ‌R.B.I. স্থাপিত হয়েছিল।

ওনারে জ্ঞান বুদ্ধি ও কৌশলের লোহা সেই সময়ের ইংরেজ ও ভারতীয় সবাই বুঝতে পেরেছিল। যারা ওনার পক্ষে ছিল ও যারা তার বিরুদ্ধে ছিল সবাই জানতেন যে এই মানুষটার মধ্যে বুদ্ধি অনেক আছে। বাবা সাহেবের ভাষাতে ,ভাষণে ,চর্চাতে, আচরণে ,ওনার লেখা বইতে ও ভারতের সংবিধানে ওনার অবদানে ওনার বুদ্ধি ও চরিত্রের বর্ণনা বরাবর পাওয়া যায়। পরে ওনাকে বাবাসাহেব নাম দেওয়া হয়। ওনাকে ভারতীয় সংবিধানের জনক বলা হয়।
বাবাসাহেব আম্বেদকর এর জীবন দিয়ে আমরা শিখতে পারি যে শিক্ষাই হলো অস্ত্র যা দিয়ে আমরা পৃথিবী পাল্টাতে পারি কারণ তার শিক্ষাই তো ছিল যার জন্য তার সামনে বড় বড় লোকেরা চুপ থাকতেন। বাবাসাহেব কে ভারতরত্ন দিয়ে সম্মানিত করা হয়।

6 ডিসেম্বর ১৯৫৬ তে বাবা সাহেবের মৃত্যু হয় কিন্তু দেশকে দেওয়া ওনার অবদান মানুষ চিরকাল মনে রাখবে।

আমি আশা করি আপনি বাবাসাহেবের জীবনী থেকে কিছু শিখলেন । দয়া করে নীচে আপনার মতামত জানাবেন এবং এই গল্পটি আপনার বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের সাথে ভাগ করবেন । পড়ার জন্য ধন্যবাদ.



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কিভাবে এক চা বিক্রেতা ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলেন।

কিভাবে ডান হাত হারানোর পরেও দু-বার গোল্ড মেডেলিস্ট হলেন।